SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

On This Page
সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দু ধর্ম শিক্ষা - আদর্শ জীবনচরিত | NCTB BOOK

মীরাবাঈ ছিলেন একজন কৃষ্ণ সাধিকা। তিনি ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজস্থানের কুড়কী নামক গ্রামে রাঠোর বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রত্নসিংহ এবং মাতা বীর কুঁয়রী। মীরা ছিলেন তাঁর পিতা মাতার একমাত্র আদরের সন্তান।

মীরাবাঈ

মাত্র আট বছর বয়সে মীরা তাঁর মাকে হারান। সে সময় মাতৃহারা মীরাকে নিয়ে তাঁর পিতা খুবই বিপদের মধ্যে পড়েন। তখন তাঁর পিতামহ রাও দুধাজী মীরাকে নিজের কাছে নিয়ে যান। পিতামহের রাজপ্রাসাদে মীরার শৈশব কাটতে থাকে। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। তিনি প্রাসাদের কাছে একটি চতুর্ভুজজীর মন্দির তৈরি করেছিলেন। 

সেখানে সাধু সন্ন্যাসীরা ধর্মীয় আলোচনা করতেন। একবার এক সাধু মীরাকে গিরিধারী গোপালের একটি বিগ্রহ দেন। এই বিগ্রহের সেবা পূজা করেই মীরার সময় কাটত। তিনি প্রিয় গোপালকে নিজের লেখা গান শোনাতেন। ছোটবেলা থেকেই শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।

মীরার বয়স যখন আঠারো। তখন চিতোরের রাণা সংগ্রাম সিংহের পুত্র ভোজরাজ সিংহের সঙ্গে মীরার বিয়ে হয়। শ্বশুর বাড়িতে তাঁর অসংখ্য দাস-দাসী ছিল। কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। কিন্তু এ রাজবাড়ি ও সংসারের প্রতি তাঁর কোনো আসক্তি ছিল না। তাঁর একমাত্র কাম্য বস্তু ছিল কৃষ্ণপ্রেম ও কৃষ্ণ আরাধনা। মাঝে মাঝেই তিনি ভাবাবিষ্ট হয়ে আপন মনে ভজন সংগীত গেয়ে উঠতেন। তাঁর মনোভাব বুঝতে পেরে স্বামী ভোজরাজ একটি কৃষ্ণমন্দির নির্মাণ করেন। মীরা খুশি হয়ে কৃষ্ণ ভজনে দিন অতিবাহিত করেন। মীরার কৃষ্ণপ্রেম এবং সুমধুর কণ্ঠে ভজন সঙ্গীতের কথা সর্বত্র প্রচারিত হয়। চিতোরের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে উঠলেন কৃষ্ণসাধিকা মীরাবাঈ নামে।

রাজ পরিবারের অনেকেই মীরার এই জীবন যাত্রাকে মেনে নিতে পারেননি। এ অবস্থায় হঠাৎ করে তাঁর স্বামী ভোজরাজ সিংহ মারা যান। তখন চিতোরের নতুন রাণা হন বিক্রমজিৎ সিং। তিনি মীরাকে হত্যা করার জন্য বহুবার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবারই গিরিধারীর কৃপায় মীরা রক্ষা পান। শেষ পর্যন্ত মীরা তাঁর পিতৃগৃহ মেড়তায় ফিরে আসেন। কিন্তু এখানেও তাঁর ঠাঁই হয়নি। তাঁর কাকার বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের কারণে মীরা চলে যান বৃন্দাবনে। বৃন্দাবনে এসে মীরা তীব্রভাবে শ্রীকৃষ্ণের প্রেমভক্তিতে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারপর একদিন তিনি বৃন্দাবনের লীলা সাঙ্গ করে কৃষ্ণের স্মৃতি বিজড়িত দ্বারকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। দ্বারকা ধামে এসে রণছোরজীর বিগ্রহের ভজন-পূজনেই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান। এই দ্বারকা ধামেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
কৃষ্ণভক্ত মীরাবাঈ ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ভগবানকে পাওয়ার পথ দেখান। তাঁর রচিত ভজন সঙ্গীত এবং ভগবৎ সাধনা এক নতুন পথের সন্ধান দিয়ে গেছে। তাঁর দেখানো এই নতুন পথ হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির সৃষ্টি করে। এই সম্প্রীতি যে মিলনধারায় প্রকাশ পায় তার নাম ‘ভক্তিবাদ'। ভক্তিবাদের মূল উদ্দেশ্য সকল শ্রেণির মানুষকে সমান চোখে দেখা।

মীরাবাঈয়ের বাণী

  • মানবজীবনের একমাত্র কাম্যবস্তু হলো কৃষ্ণপ্রেম আর গিরিধারীলালের সাক্ষাৎ।
  • একমাত্র ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ভগবানকে পাওয়া সম্ভব।
  • মিথ্যা লোভ বা ছলনায় কখনও বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়ো না।
  • ভজন সঙ্গীত মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি তৈরি করে।

শিক্ষা: মীরাবাঈয়ের জীবনী থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, যাঁরা প্রকৃত সাধক তাঁরা কখনো মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করেন না। এঁরা জাগতিক সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে যান। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সম্প্রীতির বাঁধনে বেঁধে রাখেন। দৈহিক জগতের মোহ ত্যাগ করে তাঁরা শুধু একাগ্র চিত্তে সাধনা করেন। আমরাও তাঁদের মতো সর্বদা ঈশ্বরের নাম স্মরণ করব। কর্তব্য কর্মে কোনো অবহেলা করব না। ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। জ্ঞানের আলো দিয়ে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কার দূর করব।

Content added || updated By

Promotion